অনিয়ম দূর্নীতির আখড়া মাহমুদপুর ভূমি অফিসঃবহাল তবিয়তে দুর্নীতি আর ঘুষ বাণিজ্য করে কোটিপতি”সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ ঘোষ
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস অনিয়ম-দূর্নীতি, টেম্পারিংজালিয়াতি ও ঘুষবাণিজ্যর হেরেম খানায় পরিনত হয়েছে! সিন্ডিকেট করে আদায় করা হয় লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ, এই সিন্ডিকেটের প্রধান চরিত্রে দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা, সাবেক রাস্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পূত্র বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের আস্থাভাজন ও তার সুপারিশে চাকরি পাওয়া মাহমুদপুর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ ঘোষ।
এই অফিস ভবনের ইটেও টাকা চায়। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। যাঁরা আসেন তাঁরা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েই আসেন। এখানে ফেরেশতা আসলেও টাকা দিতে হবে।’আর দালাল ছাড়া গেলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়, টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না এই অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষ ।
দিনের পর দিন তাদের ঘুষ বাণিজ্যে জিম্মি হয়ে পড়েছেন মাহমুদপুরের বাসিন্দারা।
একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, জমির খারিজ, নামজারিসহ যাবতীয় কাজ করতে গেলে ভুমি অফিসের বড়কর্তা থেকে শুরু করে সকলকেই কমবেশী টাকা দিতে হয়। টাকা দিলে টাকা দিলে কাগজপত্রে সমস্যা থাকলেও ঠিকমতো যাচাই করা হয় না।
টাকা না দিলে কোনভাবেই কাজটি সম্পাদন করেন না তারা। ফলে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছেন সেবা নিতে আশা গ্রাহকরা।
ভূমি অফিসে নিয়োজিত দালাল এবং ওমেদারদের দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন মাহমুদপুর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ ঘোষ। ঘুষ না দিলে মাসের পর মাস ফাইল নিয়ে কড়া নাড়তে হয় তাদের দরজায়। এই অবস্থা চলছে মাসের পর মাস। দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে অর্ধশতাধিক লোক অপেক্ষা করছে। এই কার্যালয়ের ভূমি সহকারী কর্মকর্তার দায়িত্বে রয়েছেন প্রসেনজিৎ ঘোষ নামে এক ব্যক্তি। তিনি নারায়নপুর গ্রাম থেকে খারিজ করতে আসা কালাম মিয়ার সঙ্গে উচ্চঃস্বরে বলছেন, লাখ টাকার জমি কিনেছেন,আর ওমেদারদের এক হাজার টাকা বকশিশ দিতে কষ্ট লাগে। ভূমি কর্মকর্তার এ ধরনের আচরণে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে পড়েন।
ভুক্তভোগী কালাম মিয়া জানান, আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। বিদেশ থেকে এসে আমার ক্রয়কৃত ৩ শতাংশ জমি খারিজ করার জন্য ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার পরও দুই মাসের মধ্যে খারিজের কাগজ হাতে পাইনি। জানি না কবে খারিজের কাগজ পাবো। এভাবেই দিনের পর দিন তাদের পিছনে ঘুরছি। আর অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
সেলিম হোসেন ও রাসেল মিয়া নামের দুই ব্যক্তি জানান, টাকা না দিলে এই অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে নায়েব পর্যন্ত ফাইলে হাত দেন না। টাকা দিলে কাগজ ঠিক থাকে। টাকা না দিলে কাগজ বেঠিক হয়ে যায়। এক প্রকার প্রকাশ্যেই ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন সেবার নামে এসকল ভূমি কর্মকার্তারা।
গোদনাইল ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা শাহ নাজ পারভীন বলেন, এক থেকে পাঁচ শতাংশ জায়গায় জন্য ২০ হাজার, পাঁচ থেকে দশ শতাংশ জায়গার জন্য ৪০ হাজার, দশ থেকে বিশ শতাংশ জায়গার জন্য ৬০ হাজার টাকা খারিজ বাবদ নেয়া হয় এই অফিসে। কাগজপত্র ঠিক না থাকলে টাকার অংক দ্বিগুণ থেকে চারগুণ পর্যন্ত আদায় করেন তারা।
আব্দুর রহমান নামে এক দলিল লেখক জানান, সরকারিভাবে খারিজ বাবদ ১১৫০ টাকা নেয়ার নিয়ম থাকলেও তারা ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খারিজ বাবদ আদায় করে থাকেন। সাধারণ মানুষ তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
অনুসন্ধান চালিয়ে জানা যায়, সরকারি নীতিমালা অমান্য করে আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ভূমি কার্যালয়ে ওমেদাররা বছরের পর বছর চাকরী করে যাচ্ছেন আর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মশোয়ারা বানিজ্যে মেতেছেন। অভিযোগ রয়েছেন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষ ওমেদারদের দিয়েই প্রতিমাসে বাণিজ্য করেন লাখ লাখ টাকা।
মাহমুদপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভুমি সহকারী কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষ অবৈধভাবে বহু টাকার মালিক বনে গেছেন। অনুসন্ধানে তাদের সম্পত্তি বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ বিষয়ে জানতে, ভুমি সহকারী কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষের ফোন ও তার হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেওয়া হলে রিসিভ না করাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা দিল্লি পালালেও ভুমি সহকারী কর্মকর্তা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রসেনজিৎ ঘোষের মতো তার দোসররা এখনও দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে রয়েছেন। তারা সুযোগ বুঝে লক্ষ্য অর্জনে ছলে বলে কৌশলে এমনকি বিগত সময়ের বিপুল পরিমাণ উপার্জিত অর্থ দিয়ে টার্গেট পূরণেও সক্ষম হচ্ছেন। শেখ হাসিনা পালালেও মাহমুদপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভুমি সহকারী কর্মকর্তা আওয়ামী দোসর প্রসেনজিৎ ঘোষের মতো হাসিনার অনেক পেতাত্মা রয়েছেন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তারা বিগত সময়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে বিত্তশালী হয়েছেন। এখন তারাই সেই অর্থ দিয়ে দুর্নীতিবাজদের ম্যানেজ করে ফেলছেন। অন্যদিকে দুর্নীতিবাজরা রাতারাতি ভোল পাল্টিয়েও ফেলেছেন।
বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বৈষম্যবিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছর পার না হতেই এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছেন ঘুষ বাণিজ্য। দুটো তদন্তের মাধ্যমে বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশে এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক শাস্তি দাবি করেছে মাহমুদপুরবাসী।

আপনার মতামত লিখুন