কমলনগর উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদের ‘দুর্নীতির রাজত্ব’ — ৬ প্রকল্পে নয়ছয় করে ৩৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ!
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের ৬টি প্রকল্প নয়ছয় করে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই ‘ঠিকাদার’ হয়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং পরে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করেন। মেসার্স আনাস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ফয়সাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে এ সব অপকর্ম করেছেন তিনি। জানা যায়, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের ৬টি প্রকল্পে আরএফকিউ ও পিআইসির মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন করে উপজেলা পরিষদ।
প্রকল্পগুলো হলো-চরমাটিন ইউনিয়নের বলিরপুল সড়কে ২টি কালভার্ট নির্মাণ এবং সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকা, তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কার বরাদ্দ ৬ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের গ্রেজেটেড নন গ্রেজেটেড কোয়ার্টার ও অন্যান্য সংস্কার বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেট সংস্কারে বরাদ্দ ৪ লাখ টাকা ও হাজিরহাট দক্ষিণ বাজার ড্রেন সংস্কারে, বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কিন্তু সব প্রকল্পেই নয়ছয় করে বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সরজমিন দেখা যায়, চরমার্টিন বলির পুল রাস্তা সংস্কার ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে বলে এলাকাবাসী জানান। আবার ওই সড়কে দু’টি কালভার্টের ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হলেও মাত্র একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।
ওখানেও রয়েছে বড় গলদ। তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টয়লেট সংস্কার নামে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও সামান্য কিছু কাজ করে বাকি টাকা হাতিয়ে নেয়া হযেছে। এদিকে, উপজেলা পরিষদের গ্রেজেটেড ও নন গ্রেজেটেড কোয়ার্টার সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও কিছু কিছু অংশে রংয়ের কাজ করেই শেষ। এ ছাড়াও হাজিরহাট বাজারের ড্রেন সংস্কারে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
চরমার্টিন বলিরপুল এলাকার বাসিন্দা হোসেন আহমেদ জানান, এ রাস্তা বন্যার সময় ভেঙে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাহাত উজ জামান স্যারের কাছে সমস্যার কথা বলার পর পরিষদের অর্থায়নে দিয়ে বেঁধে দিয়েছে। তাছাড়া মাটিতো আমি দিয়েছি। তাহলে এত টাকা লাগবে কেন। এ বিষয়ে আনাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, এ কাজগুলো উপজেলা পরিষদ থেকে করা হয়েছে। শুধু আমাদের লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ৬টি প্রকল্প আমি নিজেই স্টিমেট করে দিয়েছি। আমার স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন হওয়ার কথা। এখন শুনছি আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে বিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এভাবে বিল করার কোনো নিয়ম নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ বলেন, কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তাছাড়া চাকরিকে অনেক ভালোবাসি; আমার চাকরির ক্ষতি হবে এমন কোনো কাজ করি না।
এ বিষয়ে কথা বলতে লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী একরামুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আপনার মতামত লিখুন