পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন সুযোগ না পায়: তারেক রহমান
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন এখন এক নতুন মোড়ে দাঁড়িয়ে। এই মুহূর্তে দেশের গণতান্ত্রিক অর্জনকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা রুখে দিতে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি যেন গুপ্ত অবস্থান থেকে আর কোনো সুযোগ না পায় এই আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার ঢাকায় মতুয়া বহুজন সমাজ ঐক্যজোট আয়োজিত হিন্দু প্রতিনিধি সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন, তাদেরই মধ্যে কেউ কেউ আজ ভিন্ন আঙ্গিকে একই ধ্বংসাত্মক কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছেন এটা দেশের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক সংকেত।
তারেক রহমান বলেন, অতীতে ফ্যাসিস্ট শক্তি যেভাবে ক্ষমতার নেশায় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছিল, এখন তারই অবশিষ্ট অনুসারীরা ‘গুপ্ত শক্তি’ হিসেবে বিভিন্ন দলের ভেতর ঢুকে পড়েছে। এই গুপ্ত অনুসারীরা সুযোগ পেলেই অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
তার ভাষায়, ফ্যাসিবাদের রোষানল থেকে বাঁচতে এক সময় অনেকেই গোপনে কাজ করেছিলেন এখন সেই একই ধাঁচে কিছু অপশক্তি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নষ্ট করতে চাইছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে এই বিষয়টিতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন, ৫ আগস্ট পরাজয়ের পর যারা রাজনৈতিকভাবে বিলুপ্ত হওয়ার কথা ছিল, তারা এখন ছদ্মবেশে ফিরে এসে জাতির মধ্যে বিভাজন তৈরির অপচেষ্টা করছে। এই সুযোগ তাদের দেওয়া যাবে না বলেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্র এখন একটি সূক্ষ্ম পর্যায়ে রয়েছে। একদিকে গণমানুষের ভোটাধিকার ও জবাবদিহিমূলক সরকারের প্রত্যাশা, অন্যদিকে পরাজিত শক্তির ছায়া—এই দুই বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে ঐক্যই একমাত্র পথ। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, একটি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যই দেশের স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা। এই ঐক্য ভেঙে গেলে পরাজিত শক্তি আবার সুযোগ নেবে—তখন আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হব।
তারেক রহমান মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হলো গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠন, কোনো বিশেষ দলীয় স্বার্থ রক্ষা নয়। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হলো গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। দলীয় সুবিধা নয়, জাতীয় স্বার্থই এখন মুখ্য হওয়া উচিত।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিতর্কে আলোচিত ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রসঙ্গেও ব্যাখ্যা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, বিএনপি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কোনো উদ্দেশ্যে নয়, বরং গঠনমূলক ভিন্নমত প্রদর্শনের অংশ হিসেবেই ডিসেন্ট নোট দিয়েছে। তার বক্তব্যে ইঙ্গিত ছিল—এটি বিএনপির রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচায়ক, যা গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। “আমরা ডিসেন্ট নোট দিয়েছি কারণ এটি আমাদের দায়িত্ব—শাসন কাঠামোর প্রতি অন্ধ আনুগত্য নয়, বরং নীতি ও নৈতিকতার জায়গা থেকে যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন তোলাই গণতান্ত্রিক আচরণ,”—বলেছেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান মনে করেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সফলতার পর দেশ গঠনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। কিন্তু এই সময়ে কিছু শক্তি আবার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। তিনি বলেন, যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলেন, তাদের কেউ কেউ এখন ব্যক্তিগত স্বার্থে নতুন সুযোগকে নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। এটি খুবই দুঃখজনক। তিনি সব রাজনৈতিক শক্তিকে অনুরোধ করেন—জাতীয় স্বার্থে ঐক্য বজায় রাখতে। তাঁর ভাষায়, গণতন্ত্র কোনো দলের সম্পত্তি নয়; এটি জাতির সম্মিলিত অর্জন। তাই গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করার যে কোনো অপচেষ্টা রুখে দিতে হবে।
বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, গণতন্ত্রের বিকাশ একদিনে হয় না। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে অংশগ্রহণ, সহনশীলতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা অপরিহার্য। “আমরা চাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তার দায়িত্ব পালন করুক—একটি স্থায়ী, জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করুক। তাহলেই ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচারের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা থাকবে না।”
তারেক রহমানের বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে ‘গুপ্ত অপশক্তি’ ও ‘জাতীয় ঐক্য’-র দুটি বিষয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার এই আহ্বান দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একধরনের সতর্ক বার্তা—যা শুধু বিএনপি নয়, গোটা রাজনৈতিক মহলের প্রতিও প্রযোজ্য।
তারেক রহমানের এই ভার্চুয়াল ভাষণ এমন এক সময়ে এলো, যখন রাজনৈতিক মেরুকরণ কমে আসছে এবং বিভিন্ন পক্ষ ‘নতুন সূচনার’ কথা বলছে। এই প্রেক্ষাপটে তাঁর বক্তব্য গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকনির্দেশনাও দিয়েছে। তিনি বার্তা দিয়েছেন—গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই কোনো দলের নয়, এটি গোটা জাতির দায়িত্ব; পরাজিত শক্তি যেন আবার ছায়া থেকে মাথা না তোলে।

আপনার মতামত লিখুন