যেসকল কারণে তায়াম্মুম করা জায়েজ
ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যা মানুষের প্রতিটি অবস্থার জন্য সহজ ও বাস্তবসম্মত সমাধান দিয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের জন্য দ্বীনের কোনো বিষয়কে কষ্টকর বা অসাধ্য করে দেননি। নামাজের আগে পবিত্রতা অর্জনের জন্য সাধারণ নিয়ম হলো ওযু বা গোসল করা।
কিন্তু এমন অনেক পরিস্থিতি আছে, যখন পানি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তখন ইসলাম বিকল্প হিসেবে দিয়েছে ‘তায়াম্মুম’যা ওযু ও গোসলের বিকল্প পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি।
‘তায়াম্মুম’ শব্দটি আরবি ‘تيمم’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘ইচ্ছা করা’, ‘উদ্দেশ্য করা’ বা ‘মুখ ফিরানো’। শরীয়তের পরিভাষায় তায়াম্মুম হলো পবিত্র মাটি বা মাটির অংশবিশেষ দিয়ে মুখ ও হাত মুছে পবিত্রতা অর্জনের নিয়ম, যা ওযু বা গোসলের বিকল্প হিসেবে গণ্য হয়।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, যদি তোমরা অসুস্থ হও, অথবা সফরে থাকো, অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব পায়খানার প্রয়োজন সারতে গিয়ে আসে, অথবা তোমরা নারীদের সংস্পর্শে আসো এবং তখন পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করো; তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মুছে নাও। (সূরা আন-নিসা: আয়াত ৪৩; সূরা মায়িদা: আয়াত ৬)। এই আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, ইসলাম মানবিক প্রয়োজন ও সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনা করে বিকল্প পথ দিয়েছে, যাতে বান্দা কখনো ইবাদত থেকে বিরত না থাকে।
তায়াম্মুম করার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো পানির অভাব। মরুভূমি, ভ্রমণ বা দূর অঞ্চলে এমন অবস্থা হতে পারে যেখানে ওযু বা গোসলের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না।
যদি পানি খোঁজার পরও না পাওয়া যায়, অথবা এত অল্প পানি থাকে যা পান করার প্রয়োজনেই ব্যবহার করতে হয়, তাহলে ওযু বা গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা দুরুস্ত। হাদীসে এসেছে এক ব্যক্তি নবী করিম (সা.) এর কাছে এসে বলল, আমার কাছে পানি নেই। তখন নবী (সা.) তাকে বললেন, “পবিত্র মাটি তোমার জন্য যথেষ্ট, তা দিয়েই ওযু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করো।” (সহিহ বুখারি, হাদীস: ৩৪৭)।
অসুস্থ হলে এবং পানি ব্যবহার করলে যদি রোগ বাড়ে, ক্ষতস্থান ফুলে যায়, জ্বর বেড়ে যায় বা ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে তায়াম্মুম করা জায়েজ। ইসলাম মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিয়েছে। চরম ঠান্ডায় পানি ব্যবহার করলে শরীর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে ও পানি গরম করার ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করা বৈধ। হাদীসে একজন সাহাবি ঠান্ডার কারণে তায়াম্মুম করলে নবী (সা.) তাকে অনুমোদন দেন (আবু দাউদ, হাদীস: ৩৩৪)। পানি থাকলেও যদি তা ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, যেমন শত্রুর এলাকায়, বন্যায়, অগ্নিকাণ্ডে বা সেখানে গেলে জীবননাশের আশঙ্কা থাকে, তখনও তায়াম্মুম করা দুরুস্ত। ভ্রমণ, হজ বা যুদ্ধক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরাম তায়াম্মুম করেছেন হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) এর বর্ণনায় (সহিহ বুখারি, হাদীস: ৩৪৮)।
তায়াম্মুমের নিয়ম: ১) নিয়ত করা। ২) একবার দুই হাত পবিত্র মাটিতে মারা। ৩) মুখ মুছা। ৪) পুনরায় হাত মেরে দুই হাত কনুই পর্যন্ত মুছা। পানি পাওয়া গেলে তায়াম্মুম ভেঙে যায়। তায়াম্মুম কেবল মাটি বা পাথরজাত জিনিস দিয়ে হবে। নাপাক অবস্থায়ও পানি না থাকলে তায়াম্মুমে নামাজ আদায় করা বৈধ। ইসলাম সহজতার ধর্ম।
নবী (সা.) বলেন,“আমি তোমাদের জন্য সহজ ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।” (বুখারি)। তায়াম্মুম প্রমাণ করে, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কষ্ট দিতে চান না, বরং প্রতিটি অবস্থায় ইবাদতের সুযোগ দিতে চান। পানি না থাকলে, অসুস্থতা বা বিপদের আশঙ্কা থাকলে, চরম ঠান্ডায় বা দীর্ঘ পথে তায়াম্মুম করা যায়।
মুসলমানের দায়িত্ব হলো এই সহজ বিধান জানা ও বাস্তবায়ন করা, যাতে কোনো অবস্থায়ই ইবাদত ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

আপনার মতামত লিখুন