শেরপুর ডিসি অফিসে দুর্নীতির রোল মডেল সহকারী নাজির হাবিবুরের অবৈধ সম্পদের সাম্রাজ্য!
অভাবী পরিবারের সন্তান থেকে বিলাসবহুল জীবনের মালিক— এমন এক বিস্ময়কর উত্থানের গল্প এখন শেরপুর প্রশাসনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
অভিযুক্ত ব্যক্তি— জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী নাজির হাবিবুর রহমান।
এক সময় যার সংসার চলতো কষ্টে, আজ সেই ব্যক্তি কোটি টাকার সম্পদের মালিক!
প্রশাসনিক ক্ষমতা, দালালচক্র আর ঘুষের বাণিজ্য— এই তিন অস্ত্রে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজের প্রভাব ও বিত্তের সাম্রাজ্য, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় সূত্রের।
‘সব কাজের ঠিকানা’ হাবিবুর!
শেরপুর ডিসি অফিসের ভেতরে এখন এমন কথা প্রচলিত—
“যে কাজই করতে হবে, আগে হাবিবুরের সঙ্গে দেখা করুন!”
নিয়োগ, বদলি, টেন্ডার কিংবা ফাইল অগ্রসর— অফিসের প্রতিটি স্তরে তার প্রভাব নাকি ছড়ানো।
একজন সহকারী নাজির হয়েও তিনি হয়ে উঠেছেন প্রভাবশালী ‘দালাল সিন্ডিকেট’-এর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তি।
অভাবের সংসার থেকে অট্টালিকা পর্যন্ত
চাকরিতে যোগদানের আগে হাবিবুর রহমানের পারিবারিক অবস্থা ছিল নিদারুণ কষ্টের।
তার বাবা মফিজুল হক ছিলেন দিনমজুর। কিন্তু চাকরি পাওয়ার পর যেন ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়।
এখন সরকারি কোয়ার্টারে থাকা এই কর্মকর্তা ডিসি অফিস থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পাঁচ শতাংশ জমির ওপর তিনতলা আধুনিক বাড়ির মালিক।
এর পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে তার নামে ও বেনামে জমি, প্লট ও বাণিজ্যিক সম্পত্তি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের ভাষায়—
“একজন সহকারী নাজিরের বেতনে এই সম্পদ গড়া অসম্ভব— যদি না এর পেছনে থাকে ঘুষের টাকার জাদু!”
ঘুষের ফাইল রাজনীতি
অভিযোগ রয়েছে, ডিসি অফিসের নিয়োগ ও প্রশাসনিক ফাইল কোনোটি হাবিবুরের ‘অনুমোদন’ ছাড়া সহজে অগ্রসর হয় না।
একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন—“হাবিবুরের হাতে টাকা না দিলে ফাইল ঘোরে না। তার ‘সিগন্যাল’ ছাড়া কাজ এগোয় না।”
এমনকি প্রতিবন্ধী কর্মচারী মতিনের কাছ থেকেও ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন তিনি— যার প্রমাণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে।
এর আগেও ঘুষ নেওয়ার ঘটনায় ধরা পড়েছিলেন তিনি। সার্কিট হাউজের বাবুর্চি হুমায়ূনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার তাকে চার লাখ টাকা ফেরত দিতে বাধ্য করেন।
কিন্তু সেই ঘটনার পরও থামেননি হাবিবুর। বরং আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন—
অভিযোগ রয়েছে, ওই ঘটনার পর প্রতিশোধ নিতে তিনি হুমায়ূনের বেতনভাতা মাসের পর মাস বন্ধ রাখেন।
বদলি, প্রভাব ও পুনরাগমন
তৎকালীন ডিসি আব্দুল্লাহ আল খায়রুম তার দুর্নীতি ও আচরণে বিরক্ত হয়ে তাকে অন্য উপজেলায় বদলি করেন।
কিন্তু অবাক করা বিষয়— অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবারও ফিরলেন নিজের পুরনো কর্মস্থল শেরপুর ডিসি অফিসে!
বর্তমান জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমানের আমলে এই প্রত্যাবর্তন নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে—
“কীভাবে একজন দুর্নীতির অভিযুক্ত কর্মকর্তা এত দ্রুত আগের জায়গায় ফিরে এলেন?”
সব অভিযোগ অস্বীকার
যোগাযোগ করা হলে সহকারী নাজির হাবিবুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“সবই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র। আমাকে হেয় করার জন্য এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে।”
তবে স্থানীয় প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, এমন অভিযোগে শেরপুর জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
শেষ প্রশ্ন — আইনের চোখে কি সবাই সমান?
দেশজুড়ে যখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে, তখন প্রশাসনের ভেতরে এমন দুর্নীতির কাহিনি জনমনে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
প্রশ্ন এখন একটাই—“একজন সহকারী নাজিরের বেতনে কোটি টাকার বাড়ি, প্লট, সম্পদ— এটা কি সম্ভব?”
জনগণ বলছে, “হোক নিরপেক্ষ তদন্ত, প্রমাণ হোক— বাংলাদেশে আইনের চোখে সবাই সমান।”

আপনার মতামত লিখুন