৭ দিনে ব্রণ দূর করার উপায়
ব্রণ শব্দটি শুনলেই কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীদের মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে ওঠে। মুখ, গাল বা কপালে একটি ছোট দানাও যেন আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়।
কিন্তু ব্রণ কেবল সৌন্দর্যের সমস্যা নয়, এটি ত্বকের একটি সাধারণ প্রদাহজনিত অসুখ। অনেকে বছরের পর বছর ভোগেন এই সমস্যায়, আবার অনেকেই জানেন না কীভাবে দ্রুত ও নিরাপদে এটি দূর করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত যত্ন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা অনুসরণ করলে মাত্র ৭ দিনেই ব্রণের উন্নতি দেখা যায়।
ব্রণ সাধারণত ত্বকের রোমকূপে অতিরিক্ত তেল (Sebum) ও মৃত কোষ জমে সংক্রমণ ঘটলে তৈরি হয়। এর পেছনে প্রধান কারণগুলো হলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা (বিশেষত কৈশোরে), অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ও ফাস্টফুড, মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব, অপরিষ্কার ত্বক বা ধুলাবালি জমা, মেকআপ বা রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারে ত্বকের প্রতিক্রিয়া।
৭ দিনের ব্রণ দূর পরিকল্পনা
দিন ১: মুখ পরিষ্কার রাখুন। সকালে ও রাতে দু’বার হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। একটি মাইল্ড ফেসওয়াশ (যেমন: টি ট্রি অয়েল বা অ্যালোভেরা যুক্ত) ব্যবহার করুন। মুখে হাত দেবেন না এবং ঘাম বা ধুলাবালি জমলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করুন।
দিন ২: অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করুন। তাজা অ্যালোভেরা পাতার ভেতরের জেল বের করে ব্রণ আক্রান্ত স্থানে লাগান। ১৫–২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। দিনে ২ বার করলে উপকার মিলবে।
দিন ৩: লেবু ও মধুর মাস্ক। এক চা-চামচ লেবুর রসের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সংবেদনশীল ত্বকে সরাসরি লেবু ব্যবহার না করাই ভালো।
দিন ৪: পর্যাপ্ত পানি ও সুষম খাদ্যগ্রহণ। প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করুন। ভাজাপোড়া, দুধচকলেট, অতিরিক্ত চিনি ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল ও ভিটামিন–ই যুক্ত খাবার খান।
দিন ৫: বাষ্প নিন (Steam Therapy)। এক বাটি গরম পানিতে মুখ ৫–৭ মিনিট রাখুন (খুব কাছে নয়)। তারপর নরম তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
দিন ৬: টি ট্রি অয়েল লাগান। এক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল এক চা চামচ নারকেল তেলে মিশিয়ে তুলার সাহায্যে ব্রণের ওপর লাগান। রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করলে ভালো ফল মেলে।
দিন ৭: পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক প্রশান্তি। রাতে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমান, অল্প ব্যায়াম বা হাঁটুন, প্রয়োজনে ধ্যান বা শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যায়াম করুন।
অতিরিক্ত করণীয় টিপস: মেকআপ যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন, রোদে বেরোলে সানস্ক্রিন লাগান, তোয়ালে আলাদা রাখুন ও নিয়মিত ধুয়ে নিন, ফোনের পর্দা প্রতিদিন পরিষ্কার করুন, বালিশের কাভার সপ্তাহে অন্তত দুইবার ধুয়ে নিন।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন: ব্রণ পুঁজযুক্ত, ফোলা বা ব্যথাযুক্ত হলে; মুখের পাশাপাশি পিঠ, বুকে বা গলায় ছড়ালে; ঘরোয়া চিকিৎসাতেও ৭ দিনের পর উন্নতি না হলে। ডার্মাটোলজিস্ট ত্বকের ধরন অনুযায়ী ওষুধ বা মেডিকেল ক্লিনজার দিতে পারেন।
ব্রণ দূর করার জন্য চটজলদি রাসায়নিক পণ্য বা বাজারি ‘ব্রণ নির্মূল ক্রিম’-এর ওপর নির্ভর করা বিপজ্জনক। বরং নিয়মিত যত্ন, সুষম খাবার, পর্যাপ্ত পানি, ঘুম ও প্রাকৃতিক চিকিৎসা এই পাঁচটি নিয়ম মানলেই মাত্র সাত দিনেই ত্বক প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে পারে। সুস্থ ত্বকের যত্ন আসলে ধৈর্য, নিয়ম ও সচেতনতার সমন্বয়। নিজের যত্ন নিন কারণ আত্মবিশ্বাসই হলো সৌন্দর্যের আসল অলংকার।

আপনার মতামত লিখুন