রাজশাহীতে বেড়েছে ছিনতাই-ডাকাতি-হত্যা
রাজশাহীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতি কিংবা খুনের ঘটনা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। তানোর থেকে মোহনপুর পর্যন্ত একের পর এক ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়।
সর্বশেষ শনিবার রাতে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয়েছেন এক অটোরিকসা চালক। নিহতের নাম ফজলুর রহমান (৩৫)। তিনি তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের অমৃতপুর গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে। পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীর আসাম কলোনীতে বসবাস করতেন তিনি।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, শনিবার সন্ধ্যার দিকে ফজলুর রহমান রাজশাহী নগরী থেকে যাত্রী নিয়ে মোহনপুরের কেশরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। কেশরহাটের শিয়ালকোলা এলাকায় পৌঁছালে যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা অটোরিকসাটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা ফজলুর রহমানের গলায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় ফজলুর রহমান নিজেই অটোরিকসা চালিয়ে কেশরহাট বাজারে পৌঁছান। সেখানেই তিনি জ্ঞান হারান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোহনপুর থানার ওসি আতাউর রহমান বলেন, “আহত অবস্থায় ফজলুর রহমান নিজেই জানান, যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা অটোরিকসাটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। বাধা দিলে তাকে গলায় ছুরিকাঘাত করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে—অটোরিকসা ছিনতাই করতেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।”
এর আগে, গত ১৫ অক্টোবর রাতে তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিকাশ এজেন্ট নাসির উদ্দীনের ওপর হামলা চালায় মুখোশধারী ছিনতাইকারীরা। তারা তার কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত নাসির বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
নাসিরের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন বলেন, “ঘটনার পর থেকে আমার স্বামী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না। সংসার এখন প্রায় অনাহারে।”
এ ঘটনার পর, ২৫ অক্টোবর রাতে একই উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে ব্যবসায়ী ফটিক হাসানের বাড়িতে তিনজন ডাকাত প্রবেশ করে। তারা পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেলসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
তানোর ও মোহনপুর ছাড়াও রাজশাহীর অন্যান্য উপজেলায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের বেলা পুলিশের টহল কম থাকায় অপরাধীরা সুযোগ নিচ্ছে। ফলে সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় ছিনতাই ও ডাকাতির ১৪টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, রাজশাহী মহানগর এলাকায় একই সময়ে ২১টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর পুলিশ (আরএমপি)।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নগর ও গ্রামীণ এলাকায় রাতের নিরাপত্তা জোরদার করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা আরও কার্যকর করতে হবে।
রাজশাহীর সচেতন নাগরিকরা আশা করছেন, দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে ছিনতাই ও ডাকাতির দৌরাত্ম্য কমে আসবে এবং রাজশাহী আবারও ‘নিরাপদ নগরী’ হিসেবে পরিচিতি ফিরে পাবে।

আপনার মতামত লিখুন