এম এ রশিদ
প্রকাশের সময়: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫ । ১:০৫ পূর্বাহ্ণ
দেশের প্রতিটি ভূমি অফিস এখন ঘুষ দুর্নীতির আঁতুড়ঘর। এখানে সামান্য একটি নামজারি করতেও গুণতে হয় ২০/২৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে কখনো কখনো লাখ লাখ টাকা। আর খোদ রাজধানীতে এই ঘুষের হার কয়েকগুণ বর্ধিত হয়েছে অনেকটা সরকারি অফিসের বাধ্যতামূলক আইনে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারালেও ভূমি সহকারী, উপ সহকারী কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ও কানুনগো হচ্ছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক।
এদেরই একজন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হামিদ খান ঘুষ দুর্নীতির টাকা আর উপঢৌকনে পদন্নোতি পেয়ে হয়েছেন পূর্ণাঙ্গ নায়েব বা ভূমি সহকারী কর্মকর্তা। তাঁর পূর্বের কর্মস্থল ডেমরা রাজস্ব সার্কেলের ” নন্দী পড়ায় ” তিনি ছিলেন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তা। ঘুষ দুর্নীতি নামজারি বাণিজ্য, এপি, ভিপি এলএ, পেরিফেরিভূক্ত, ফিরনিবাস নয়ছয় করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। দেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ভুক্তভোগীরা যখন ভাবছেন হামিদ খান এবার বিচারের মুখোমুখি হবেন, দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম চালাবে আকষ্মিক তদন্ত। কিন্তু দৃশ্যমান তেমন কিছুই হয়নি বরং ঘুষ দুর্নীতি ও কালো টাকার পাওয়ারে সাবেক ছাত্রলীগের এই পেতাত্মা এখন পদন্নোতি পেয়ে হয়েছেন মোহাম্মদপুর রাজস্ব সার্কেলের পূর্ণাঙ্গ নায়েব বা ” ভূমি সহকারী কর্মকর্তা “।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, নামজারীতে সমস্যা আছে বলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে টেনে নেন ২০/২৫ হাজার থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২/৩ লাখ টাকা। ভায়া দলিলের ক্ষেত্রে হাতিয়ে নেন ৩০ হাজার থেকে এক দেড় লাখ টাকা। একজন ভূক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন আমার নামের বানান ভুল আছে বলে আমার কাছ থেকে ডিসিআরএর ১১৭০ টাকা বাদেও হাতিয়ে নিয়েছে ২ লাখ টাকা। মূলত এখানে ঘুষ ছাড়া মেলেনা সেবা, নড়েনা ফাইল।
নায়েব হামিদ খানের মূল ধান্দা নামজারী, এপি, ভিপি, এলএ, পেরীফেরীভূক্ত, ফিরনিবাস বরাদ্দ নবায়ন ও তদন্ত রিপোর্ট নামের রমরমা বাণিজ্য। আর এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে তাঁর সৃষ্ট সংঘবদ্ধ দালাল সিন্ডিকেট ও তার কথিত সহকারী।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সে দালালদের সাথে নিয়ে সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে শুরু করে রাত ৭/৮টা বা কোনো কোনোদিন মধ্যরাত পর্যন্ত অফিস করে থাকেন।
এসিল্যান্ড সাহেবের কঠোর নির্দেশ গ্রাহক ছাড়া কোনো দালাল ভূমি অফিসে ঢুকবে না। অথচ এই আদেশ তোয়াক্কা করছে না ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হামিদ খান। বর্তমানে এই অফিসে তার একছত্র আধিপত্য ও ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হবে, এটি কোনো সরকারি অফিস নয়, যেনো তার শ্বশুরালয়।
ভুক্তভোগীরা বলেন, এই অফিসে দালাল বা দলিল লেখকদের না ধরলে গ্রাহকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না।
পতিত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে নিজেকে শেখ হাসিনার কাছের মানুষ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সন্তান পরিচয় দিয়ে তার কর্মস্থলগুলোতে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। এতে ব্যক্তিগতভাবে ভূমি কর্মকর্তা হামিদ খান লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। তাই এই অফিস থেকে ভূমি কর্মকর্তা হামিদ খানকে অনতিবিলম্বে অপসারণ ও তাঁর অবৈধ সম্পদের খোঁজ তল্লাশী নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফ মহোদয়সহ দুদক এনফোর্সমেন্ট টিমের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।।