চট্টগ্রামে বন ধ্বংস:( সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার) ফরেস্ট রেঞ্জার মানিকের বিরুদ্ধে বন ধ্বংসের গুরুতর অভিযোগ, তদন্তের দাবি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশের সময়: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫ । ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগে  ফরেস্ট রেঞ্জার মানিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে  চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তিন বন কমকর্তা বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্য অভিযোগ উঠেছে অনেক আগে থেকে  রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস করে কোটি টাকার কাঠ পাচারের অভিযোগ উঠেছে ফরেস্ট রেঞ্জার মো. মেহেদী হাসান মানিকের  বিরুদ্ধে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বন কর্মকর্তা  নিয়মিতভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটার এবং বিক্রির সাথে সরাসরি যুক্ত বলে দাবি করেছেন একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি ও বন বিভাগের কর্মীরা।বিশেষ করে রাঙ্গুনিয়া এভিয়ারি ও ইকো পার্ক এলাকায় নিয়মিতভাবে গাছ কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। চন্দ্রঘোনার এক কাঠ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “বন থেকে প্রতিদিন রাতের আঁধারে কাঠ পাচার হচ্ছে ফরেস্ট রেঞ্জার, রেঞ্জ কর্মকর্তা, মেহেদী হাসান মানিকের সহায়তায় এসব কাঠ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে।” স্থানীয় সূত্র জানা গেছে  এ বছরের এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫টি মূল্যবান সেগুন গাছ পার্কের ভেতর থেকে কেটে বিক্রি করেছেন মানিক। প্রতি গাছের মূল্য গড়ে ৪০ হাজার টাকা হিসেবে এ টাকার পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঘটনা প্রকাশ পেলে তিনি লোকদেখানোভাবে ২৫০ ঘনফুট কাঠ জব্দ দেখিয়ে বন অফিসে হেফাজতে নেন। কিন্তু বন কর্মকর্তা মোতালেব আল আমিনের সহযোগিতায় সেই জব্দকৃত কাঠের ২০০ ঘনফুটই পরে ৪ লাখ টাকায় স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীর কাছে আবারও বিক্রি করে দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (ডিএফও) আব্দুল্লাহ আল মামুন একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন, যার আহ্বায়ক করা হয় সহকারী বন সংরক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেনকে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশিত হয়নি এবং তদন্ত কার্যক্রমকেই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। গোপন সূত্র দাবি করেছে, মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তদন্ত প্রতিবেদন গায়েব করা হয়েছে। একজন বনকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “ফরেস্ট রেঞ্জার মানিক শুধু গাছ বিক্রিই নয়, নিজেই কাঠ পাচারের লাইন পরিচালনা করেন। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০টি কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, পিকআপ— এসব যানবাহনের মাধ্যমে কাঠ পাচার হয়।” স্থানীয়দের দাবি, এই পাচারের রুট হলো কোদালা বিট থেকে রাঙ্গুনিয়া পার্ক পর্যন্ত এবং সেখান থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে। রেঞ্জ অফিসের তথ্য অনুসারে, এসব গাড়ি থেকে মানিক প্রতিটি গাড়ির জন্য ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। এই অর্থের একটি অংশ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাঝেও ভাগ হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।সম্প্রতি রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি একটি কাঠবোঝাই ট্রাক আটক করলে সংশ্লিষ্ট কাঠ ব্যবসায়ী খোকন বলেন, তিনি ফরেস্ট রেঞ্জার মানিকের অনুমতিতেই কাঠ পরিবহন করছিলেন। ওসি বিষয়টি যাচাই করতে মানিককে ফোন করলে তিনি সরাসরি কিছু না বললেও বিষয়টি এড়িয়ে যান। বিশেষ অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরেস্ট রেঞ্জার মানিক পার্কের মধ্যে ভোজ্য ও বনজ মিলিয়ে প্রায় ৫০০টি গাছ কোনো ধরনের সরকারি অনুমোদন ছাড়াই ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে মাহবুব নামে এক রাজনৈতিক নেতার কাছে বিক্রি করেন। সরেজমিনে গিয়ে গাছ কর্তনের মোথা (গোড়ার অংশ) গুনে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বন সংরক্ষক কার্যালয় সূত্র জানায়, ফরেস্ট রেঞ্জারদের অবাধ কর্তৃত্ব এবং রাজনৈতিক যোগসাজশের কারণেই বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নীরব থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। জানা গেছে, ৪ মাস আগে সিএফ (চিফ কনজারভেটর অফ ফরেস্ট) তার কার্যালয়ে এক গোপন বৈঠকে নতুন রেঞ্জারদের নিয়ে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেন, এরপর থেকেই দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে।মানিকের বিরুদ্ধে ওঠা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও বেশ গুরুতর। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছাত্রলীগ অনুসারী এবং তার সুপারিশেই বন অধিদপ্তরে নিয়োগ পা। এছাড়া স্থানীয়ভাবে তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন।আলোচিত এই ফরেস্ট রেঞ্জারদের নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের অনেকেই ছাত্রলীগ-সমর্থিত পরিবার থেকে আসা এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ সম্পন্ন করা হয় বলে দাবি করেছে একাধিক সূত্র।এ প্রসঙ্গে এক সাবেক বন কর্মকর্তা বলেন, “ফরেস্ট রেঞ্জার হলো দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারী কর্মচারীর পদ। এটি কোনো বিসিএস ক্যাডার পদ নয়। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্তরা নিজেদের বিসিএস নন-ক্যাডার অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে কর্তৃত্ব ফলাচ্ছেন এবং দুর্নীতিকে বৈধতা দিচ্ছেন।”মানিক ও তার ঘনিষ্ঠ  কয়েকজনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তারা নিয়মিতভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের কয়েকজন  সাবেক মন্ত্রী ও নেতাদের সাথে  চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গোপন বৈঠক করছেন এবং বন বিভাগের অভ্যন্তরে সরকারবিরোধী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো মানিকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। তাদের মতে, “বন সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এই ধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা রাঙ্গুনিয়ার প্রাকৃতিক বন একদিন সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।” চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “উপরের চাপের কারণে আমরা অনেক সময়ই কিছু বলতে পারি না। তবে যদি প্রশাসন আন্তরিক হয়, তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব।” এই বিষয়ে মানিকের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন করা হলে তার ব্যবহৃত নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।এই বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আবদুল্লা আল মানুম বলেন, তার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিস্তারিত  আসছে  দ্বিতীয় পর্বে
  কপিরাইট © দূর্নীতির ডায়েরি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন