যশোরের গণমানুষের নেতা, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে যশোরের টাউন হল ময়দানে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন।
স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আজীবন সংগ্রামী কিংবদন্তিতুল্য নেতা মরহুম তরিকুল ইসলাম মা, মাটি ও মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। যশোরের উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। কখনো অন্যায় বা অনিয়মের সঙ্গে আপস করেননি। শত নির্যাতন সহ্য করেও আদর্শের প্রতি ছিলেন অবিচল। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের পতনের আন্দোলনে তিনি দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু দুঃখজনকভাবে স্বৈরামুক্ত বাংলাদেশ দেখে যেতে পারেননি। আজকের বাংলাদেশে তাঁর মতো নেতার খুব প্রয়োজন ছিল।”
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “তরিকুল ইসলাম ছিলেন এক ক্ষণজন্মা পুরুষ, তাঁর মতো নেতারা যুগে যুগে একবারই জন্ম নেন। আজকের এই স্মরণসভা থেকে আমরা তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আগামীকাল ৭ নভেম্বর জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা এক হয়ে জাতিকে মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছিলেন। তখন ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়ে গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে চায়। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া ঠিক হয়নি—এতে রাজনৈতিক দলগুলো উপদেষ্টাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা অনেক সহ্য করেছি। বিএনপি রাজপথে ভেসে আসা কোনো দল নয়; আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করে রাজনীতি করি। আমাদের হেলাফেলা করে কেউ ভুল করবেন না। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার পরিণাম ভালো হবে না। একটি দল রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা করছে, যার ফল কখনো ভালো হবে না। সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তার দায় কারও পক্ষে এড়ানো যাবে না। তাই দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিদায় হোক, সেটা বিএনপি চায় না; তবে নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করলে তার পরিণাম শুভ হবে না।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন প্রকৌশলী টি. এস. আইয়ুব, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবিরা সুলতানা মুন্নি, আবুল হোসেন আজাদ, অমলেন্দু দাস অপু, জাহানারা সিদ্দিক, জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, আলী আহম্মদ, মনোয়ার হোসেন, হাসান জহির, তানিয়া রহমান, জহুরুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল মান্নান এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান আকরাম প্রমুখ।
স্মরণ সভার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নার্গিস বেগম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর জেলার সব থানা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
পরিশেষে মরহুম তরিকুল ইসলামের রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং যশোরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এসময় ধানের শীষের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন নেতৃবৃন্দ।

যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশের সময়: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ । ১১:৩৬ অপরাহ্ণ