বহুবিবাহ, প্রতারণা ও ভয় দেখানো মামলা, চিৎলার ফাল্গুনী ওরফে সেতুর রাজত্ব শেষের পথে! দামুড়হুদার সেতুর বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় তুলেছে গ্রামবাসীঃ অবশেষে বিচারের দাবিতে গ্রামবাসীর গণপিটিশন দাখিল

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশের সময়: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫ । ১১:০২ অপরাহ্ণ

চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা (নতুনপাড়া) গ্রামে মোছাঃ ফাল্গুনী বিশ্বাস ওরফে সেতু খাতুন (৩০) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, বহুবিবাহ ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। ওই নারীর দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসী অবশেষে দেড় শতাধিক স্বাক্ষরসহ গণপিটিশন দাখিল করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তিথি মিত্র বরাবর।

গতকাল রবিবার বেলা ১১টার দিকে চিৎলা গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই গণপিটিশন জমা দেন। এতে তারা ফাল্গুনী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

দীর্ঘদিনের প্রতারণার অভিযোগ

স্থানীয়দের অভিযোগ, মৃত আব্দুর রাজ্জাকের কন্যা ফাল্গুনী বিশ্বাস প্রায় এক দশক ধরে চতুরতার সঙ্গে বিভিন্ন পুরুষকে প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করছেন। একেকজনকে বিয়ে করার পর কিছুদিন সংসার করে তিনি দেনমোহর, খোরপোশ ও বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে সংসার ভেঙে দেন। তারপর আবার নতুন শিকার খুঁজে বের করেন।

গণপিটিশনে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১০-১১ জন পুরুষের সঙ্গে ফাল্গুনী বিশ্বাসের বিয়ে বা সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনেকে তার হাতে প্রতারিত হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন, কেউ কেউ লজ্জা ও মান-সম্মানের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারেননি।

প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা

চিৎলার কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জানান, কেউ যদি তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করে, অথবা বোঝানোর চেষ্টা করে, ফাল্গুনী তখনই নারী নির্যাতন বা শ্লীলতাহানির অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
ফলস্বরূপ, গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন নিরীহ মানুষ পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকে এখনো এসব মামলায় আদালতের চক্রে ভুগছেন।

গ্রামবাসীর ক্ষোভ

চিৎলা গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, নারী ও তরুণ সমাজ একত্রিত হয়ে সম্প্রতি গণপিটিশন তৈরি করেন।
এতে স্বাক্ষর করেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী, ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান, এবং আরও অনেকে।

গ্রামবাসীর অভিযোগ—ফাল্গুনীর এমন আচরণের কারণে এলাকার সামাজিক বন্ধন নষ্ট হচ্ছে। পারিবারিক শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে, তরুণ সমাজ বিভ্রান্ত হচ্ছে, এবং গ্রামের নারী সমাজও চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে।

এক প্রবীণ নাগরিক বলেন,

“এই নারী গ্রামে বিষের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। একের পর এক মানুষকে ফাঁদে ফেলছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে গ্রামের শান্তি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।”

প্রশাসনের দ্বারস্থ গ্রামবাসী

গ্রামবাসীর প্রতিনিধি দল গণপিটিশন জমা দিয়ে ইউএনও তিথি মিত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং অভিযোগের তদন্ত চেয়ে লিখিত অনুরোধ জানান।
ইউএনও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এর আগেও ফাল্গুনী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে একটি গণপিটিশন দামুড়হুদা মডেল থানায় জমা দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ না থাকায় গ্রামবাসীর ক্ষোভ আরও বেড়েছে।

সচেতন মহলের মত

সচেতন মহল বলছে, বহুবিবাহ ও প্রতারণার মতো অপরাধ সমাজে অনৈতিকতা বাড়ায় এবং নিরীহ মানুষকে বিপদে ফেলে। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যেন কেউ আর ফাল্গুনীর মতো প্রতারক ব্যক্তির ফাঁদে না পড়ে।

চিৎলা গ্রামের সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—

“ফাল্গুনীর বিচার কবে হবে?”

প্রসঙ্গত: চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের নতুনপাড়া গ্রামটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রায় দুই হাজার মানুষের বসবাস। ওই নারীর কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকার সামাজিক পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

দামুড়হুদা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন গণ পিটিশনে আমি সাইন করেছি এবং ঘটনা সম্পর্কে অবগত আছি। সামাজিক অবক্ষয় রোধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জুরুরি বলে মনে করি।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির বলেন, বর্তমানে উপজেলার চিৎলা গ্রামে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সচেতন মহল মনে করছে, সমাজের ভারসাম্য রক্ষা ও নিরীহ মানুষের সুরক্ষার স্বার্থে এমন প্রতারক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরী।

এ ঘটনায় দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর মুঠোফোনে বলেন এ বিষয়ে এখনো কেউ কোন অভিযোগ করেনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তিথি মিত্র বলেন এ বিষয়ে গণ পিটিশন আকারে একটা অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত স্বাপেক্ষে কী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সে ব্যাপারে পরবর্তীতে জানানো হবে।

  কপিরাইট © দূর্নীতির ডায়েরি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন