বাংলাদেশে প্রথমবার ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল সরকারি ঋণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশের সময়: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ । ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের সরকারি ঋণ প্রথমবারের মতো ২১ লাখ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেছে। অর্থ বিভাগের সদ্য প্রকাশিত ঋণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে সরকারের মোট দায় দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৮ দশমিক ৮৯ ট্রিলিয়ন টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সরকারি ঋণের বড় অংশই এখন বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৯ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৪৪ শতাংশ। গত পাঁচ বছর ধরে এ অংশটিই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ২০২১ সালে যেখানে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন টাকা, সেখানে এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড–পরবর্তী অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বাজেট সহায়তা, পাশাপাশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়ন বৈদেশিক ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও সরকারের ঋণভার আগের বছরের তুলনায় কম নয়। গত অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন টাকা, যা আগের বছরের ১০ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন টাকার চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। মাত্র চার বছর আগে ২০২১ সালে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন টাকা—অর্থাৎ এখানেও বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।

বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ বাজারে সরকারের ধার নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাংকঋণের সুযোগ কমে যায়—যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ায় সরকারকে বারবার ধার নিতে হচ্ছে। রাজস্ব বাজেট উদ্বৃত্ত না থাকায় উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অংশই নির্ভর করছে ঋণের ওপর।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)–এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে সরকারের ঋণের ওপর নির্ভরতা আরও বাড়বে। উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখতে সরকারি খাত বারবার নতুন ঋণের দিকে ঝুঁকছে—যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

অর্থনীতিবিদদের ভয়—ঋণের এ ধারাবাহিক বৃদ্ধি ভবিষ্যতে সুদ পরিশোধের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে সরকারের মোট বাজেট ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই সুদ পরিশোধে চলে যাচ্ছে। ঋণের বোঝা যত বাড়ছে, ততই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার, করনেট সম্প্রসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া এই প্রবণতা থামানো কঠিন হবে।

সরকারি ঋণ ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়ানোর বিষয়টি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়—এটি অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ ও ভবিষ্যৎ বাজেট কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। দেশের চলমান উন্নয়নধারাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য এখনই প্রয়োজন রাজস্ব আয় বাড়ানো, ঋণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয় বন্ধ করা।

  কপিরাইট © দূর্নীতির ডায়েরি সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত

প্রিন্ট করুন