খুঁজুন
শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ৩০ কার্তিক, ১৪৩২

ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে রানা-জাহাঙ্গীর-রুরেল দালাল চক্রে অতিষ্ঠ সিলেট সদর নির্বাচন অফিস

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ২:২৮ পূর্বাহ্ণ
ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে রানা-জাহাঙ্গীর-রুরেল দালাল চক্রে অতিষ্ঠ সিলেট সদর নির্বাচন অফিস

জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি নাগরিক জীবনের অপরিহার্য দলিল—ব্যাংক হিসাব খোলা, জমি কেনাবেচা, পাসপোর্ট, ভোটার তালিকা এমনকি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রেও এটি এখন অপরিহার্য। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সেবা নিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ পড়ছেন সীমাহীন দুর্ভোগে। সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস ঘিরে গড়ে উঠেছে এক প্রভাবশালী দালালচক্র, যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, অনিয়ম ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে বারবার।

রানা, জাহাঙ্গীর ও রুরেল সিন্ডিকেট :
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন অফিসের আশপাশে অবস্থানরত রানা নামে এক দালাল দীর্ঘদিন ধরে এনআইডি সংশোধন, পুনঃপ্রদান ও দ্রুত কার্ড সরবরাহের নামে অর্থ আদায় করে আসছে। রানার সঙ্গে অফিসের ভেতরে যোগসাজশে কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে কর্মচারী জাহাঙ্গীর ও রুরেল নামে দুই জনের বিরুদ্ধে। আবেদনকারীর ফাইল আটকে রাখা, অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করানো এবং “ম্যানেজ খরচ” নামে অর্থ আদায়—সবকিছুই চলে তাদের মাধ্যমেই। একাধিক ভুক্তভোগীর দাবি, এই তিনজনের কার্যক্রমে নির্বাচন অফিস কার্যত দালালনির্ভর বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

প্রবাসীদের ঘাড়ে দুর্ভোগ :
প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে এনআইডি সংশোধন ও পুনঃপ্রদানের চাহিদা বেশি। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মনোয়ারা খাতুন জমির কাগজপত্র ঠিক করতে দেশে এসে এই চক্রের ফাঁদে পড়েন। তিনি জানান, “রানা নামে এক লোক এসে বলল, ভেতরের লোকজনকে ম্যানেজ না করলে মাসের পর মাস লেগে যাবে। বাধ্য হয়ে দশ হাজার টাকা দিয়েছি। তিন দিনের মধ্যে কপি এনে দিল, কিন্তু জানি না নিয়মমাফিক হয়েছে কিনা।” একইভাবে কুয়েতপ্রবাসী শাহিন আহমদ বলেন, “চার দিন ঘুরেও কাজ হয়নি। শেষে এক দালালকে আট হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।”

ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে সক্রিয় দালালচক্র :
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. ফরহাদ হোসেনের অবহেলা ও দুর্বল নজরদারির সুযোগে এই দালালচক্র দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়াভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অফিসের সামনে প্রতিদিন রানা ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে অবস্থান করে আবেদনকারীদের ধরছে, টাকা নিচ্ছে—কিন্তু প্রশাসনিক কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষ এদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানে, তবুও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, “দালালরা সুযোগ নেয়। কিছু কর্মচারীও এতে জড়িত থাকে। জনবল সীমিত হওয়ায় অফিসে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।”

তিন ধাপে চলে দালালদের বাণিজ্য :
স্থানীয় সূত্রে দালালচক্রের কার্যক্রম তিন ধাপে পরিচালিত হয়-

প্রথম ধাপ: অফিসের বাইরে অবস্থান করে আবেদনকারীর সমস্যা জেনে দ্রুত সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া।
দ্বিতীয় ধাপ: ভেতরের কর্মচারীর মাধ্যমে ফাইল অগ্রাধিকার পাওয়া বা আটকে রাখা।
তৃতীয় ধাপ: ‘ম্যানেজ খরচ’ নামে টাকা লেনদেন, যার একটি অংশ জাহাঙ্গীর-রুরেলদের মাধ্যমে অফিসের ভেতরে পৌঁছে যায় বলে অভিযোগ।

আরও উদ্বেগজনক অভিযোগ হলো, এই দালালচক্রের মাধ্যমে ভুয়া এনআইডিও তৈরি হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছু রোহিঙ্গা ও অননুমোদিত ব্যক্তি টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশি এনআইডি পাচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এটি শুধু দুর্নীতি নয়, জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি।”

অফিসের ভেতরে বিশৃঙ্খলা ও সার্ভার অজুহাত :
সিলেট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই শতাধিক মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে। কেউ বলছেন সার্ভার কাজ করছে না, কেউ অফিসারের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় কয়েকজন দালাল প্রকাশ্যে আবেদনপত্র পূরণ ও ‘দ্রুত কাজ করে দেওয়ার’ প্রস্তাব দিতে দেখা যায়।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, “প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রার বড় উৎস। তাদের হয়রানি মানে অর্থনীতিকে আঘাত করা। দালালচক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত ও জবাবদিহি জরুরি।” তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তিনির্ভর সেবাকাঠামো গড়ে না তুললে এই চক্র থামবে না।”

সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসের সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মো. মুঞ্জুরুল আলম বলেন, “আমরা দালালদের প্রশ্রয় দিই না। কেউ প্রতারিত হলে লিখিত অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়দের দাবি, “মাঠ পর্যায়ে বাস্তব ব্যবস্থা না নিলে কোনো পরিবর্তন হবে না।” সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, “প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় কিছু কর্মচারী আর্থিক সুবিধা নিয়ে দালালদের মাধ্যমে কাজ করায়—এমন অভিযোগ বহুদিনের। প্রশাসন চাইলে এদের চিহ্নিত করা কঠিন নয়।” রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের প্রতীক এনআইডি আজ দালালদের কবলে বন্দি। রানা, জাহাঙ্গীর ও রুরেলের মতো ব্যক্তিরা সরকারি সেবাকে বাণিজ্যে পরিণত করেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. ফরহাদ হোসেনের অবহেলা ও দুর্বল তদারকির কারণে এই চক্র দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়।
প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনা ও কঠোর প্রশাসনিক অভিযান ছাড়া দালালচক্রের এই দৌরাত্ম্য বন্ধ করা সম্ভব নয়।

জমির দলিল করতে দাও লাখে লাখ—জেলা রেজিস্ট্রার আলী আকবরের নির্দেশে চাঁদপুরে চলছে “ঘুষের মহোৎসব”

ক্রাইম রিপোর্টার
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১:০৯ পূর্বাহ্ণ
   
জমির দলিল করতে দাও লাখে লাখ—জেলা রেজিস্ট্রার আলী আকবরের নির্দেশে চাঁদপুরে চলছে “ঘুষের মহোৎসব”

জমি-জায়গা নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে ‘সংকটে’ পড়েননি বা ‘জিম্মি’ হতে হয়নি এমন কাউকে পাওয়া বিরল। বিশেষ করে অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে।   বেতন পান তারা। অথচ ব্যতিক্রম ছাড়া কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার মালিক তারা। চাকরি করেন চাঁদ পুর জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে  কিন্তু অট্টালিকা তুলেছেন জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরে। রাজধানীতে ফ্ল্যাট। ছেলেমেয়েদের পড়ান বিদেশে। কীভাবে সম্ভব? একজন জেলা -রেজিস্ট্রার বেতন পান ন্যূনতম ২২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার ৬০ টাকা।

এক জমির বহুবার মালিক বদল হয়। কেনা সূত্রে; উত্তরাধিকার সূত্রে; দান সূত্রে বদল হয় জমির দলিল। এই বদল করতে টাকায় টাকায় পার হতে হয় ‘ঘুষের ঘাট’। ধরা যাক; গ্রামের এক নিম্ন আয়ের মানুষ রেজিস্ট্রি অফিসে গেলেন। এরপর তার সামনে ভয়ংকর পিয়ন, উমেদার, নকলনবিশ সর্বোপরি সাব -রেজিস্ট্রার। কীভাবে একজন জেলা -রেজিস্ট্রার  কোটি কোটি টাকার মালিক?হয়

চাঁদপুর জেলা রেজিস্ট্রার আলী আকবর –

নকল তুলতে নেন ৪ হাজার টাকা। সরকারি ফি ছাড়া অতিরিক্ত নেন প্রায় ১২ গুণ। হেবা দলিল সম্পাদনা ফি মাত্র ১ হাজার ২৩০ টাকা। এর বদলে তিনি নেন ৬০ হাজার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, শতাংশের হিসাব কষে ঘুষ নেন তিনি। না দিলে কাজ তো হবেই না, উল্টো দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। অবশেষে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়েই ফিরতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) প্রতিনিয়ত সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম ও দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভিযোগ জমা পড়ছে। এসব অভিযোগের কোনোটি প্রাথমিক অনুসন্ধানে সত্যতা পেলে আবার কোনোটি এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের অভিযানে সত্যতা মিললে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে চাঁদ পুর জেলা রেজিস্ট্রার আলী আকবরের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষগ্রহণ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়ায় সম্প্রতি অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি

নারায়ণগঞ্জ সদর   সাব-রেজিস্ট্রার থাকাকালে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও স্ত্রী-সন্তানের নামে রাজধানী সহ বিভিন্ন জায়গাতে ফ্লাট  কিনেছেন এবং  প্লট কেনাসহ ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন।

দুদকের তথ্যমতে, গত বছরের  নারায়ণগঞ্জ সদর   সাব-রেজিস্ট্রার  আলী আকবর  বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষবাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে  দুদকে। কমিশন অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকীকে অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের একজন কর্মকর্তা  বলেছেন, সাব-রেজিস্ট্রার থাকা কালে  নবম গ্রেডের একজন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে মাসে ৬০-৭০ হাজার টাকা বেতন পান। তার এই চাকরি ছাড়া আর কোনো আয়ের উৎস নেই। অথচ নিজ একতলায়   একটি বাড়ি ও প্লট, ঢাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট,  প্লট কেনার অভিযোগ রয়েছে।

দুদকের কাছে অভিযোগে বলা হয়, চাঁদ পুর জেলা রেজিস্ট্রার  অফিসের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ের তালিকা টানানো থাকলেও তা মানা হয় না। তালিকায় বিভিন্ন প্রকৃতির দলিলের মধ্যে সাফ-কবলা, হেবা ঘোষণাপত্র, দানপত্র ও বন্ধকী দলিল সম্পাদনের জন্য পৃথক ফি উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পেশকার, মুহুরি বা সংশ্লিষ্টদের সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা নিয়ে দলিল সম্পাদন করতে বাধ্য করে। প্রতিটি দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে দলিলে উল্লিখিত জমির মূল্যের ওপর ১ শতাংশ টাকা অফিসকে দিতেই হয়। এই ১ শতাংশ টাকা অফিসকে না দিলে দলিল সম্পাদন হয় না। এ ছাড়া অফিসের মুহুরি ও অন্যান্য কর্মচারীর জন্য আলাদা খরচ দিতে হয়। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সাধারণ মানুষ যেন জিম্মি।

অভিযোগে আরও বলা হয়  দলিল সম্পাদনে দীর্ঘদিন ধরে ফির নামে বাড়তি টাকা আদায় করা হয়। নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা না দিলে কোনো কাজ হতো না। জমি রেজিস্ট্রিকালে যে পরিমাণ অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়, তার একটি অংশ পেতেন জেলা -রেজিস্ট্রার। আলী আকবর  দায়িত্ব পালনকালে একই কায়দায় অর্জিত অর্থ আদায় করে নিজের ও স্ত্রী-সন্তানের নামে বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল পরিমাণ সম্পদ কেনেন।

অভিযোগে বলা হয়, প্রতিটি হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল রেজিস্ট্রির জন্য সরকার নির্ধারিত ফি রয়েছে ১ হাজার ২৩০ টাকা। কিন্তু ৫০ লাখ টাকা মূল্যমানের হেবা-ঘোষণাপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য অফিসে গিয়ে একজন জমি ক্রেতার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় অন্তত ৬০ হাজার টাকা।

অভিযোগে আরও বলা হয়, একটি সাফ-কবলা দলিল সম্পাদনের জন্য সরকারি ফি হচ্ছে জমির মোট মূল্যের ওপর প্রতি লাখে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। কিন্তু সেখানে নেওয়া হয় লাখে প্রায় ১০ হাজার টাকা। আবার অফিসকে দিতে হয় জমির মোট মূল্যের ওপর আরও ১ শতাংশ। এতে সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হয়।

অভিযোগে বলা হয়, দানপত্র দলিল সম্পাদনের জন্য ২ শতাংশ উৎস কর নেওয়ার কোনো বিধান নেই। জমি ক্রেতা শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মুহুরি ২ শতাংশ উৎসে করের টাকা নেন। এ ছাড়া অফিস খরচ বাবদ অতিরিক্ত আরও ১ শতাংশ টাকা নেন। অতিরিক্ত অর্থ না দিলে বিভিন্ন আইনি জটিলতা দেখিয়ে দলিল সম্পাদন বন্ধ রাখার হুমকি দেওয়া হয়। এ ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের একটি নকল ওঠাতে সরকারি ৩৩০ টাকা ফির স্থলে জমি ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে জেলা -রেজিস্ট্রার  আলী আকবর  মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি

শাকিব খানের নায়িকা হচ্ছেন হানিয়া আমির

বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ
   
শাকিব খানের নায়িকা হচ্ছেন হানিয়া আমির

গেল কয়েক বছরে শাকিব খানের ভেতর বেশ বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অভিনয়ে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করেও দর্শকদের চমকে দিচ্ছেন তিনি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ের লুক, গেটআপ এবং নিজস্ব স্টাইলের কারণে তরুণ প্রজন্মের মাঝেও তিনি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

এই মুহূর্তে শাকিব খান তার নতুন ছবি ‘সোলজার’ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এরই মধ্যে নতুন খবর, আসন্ন একটি ছবিতে তার বিপরীতে দেখা যেতে পারে পাকিস্তানের আলোচিত অভিনেত্রী হানিয়া আমিরকে। এমন তথ্য নিজেই জানিয়েছেন শাকিব।

সম্প্রতি কনটেন্ট ক্রিয়েটর রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের একটি ভিডিওতে শাকিব খান মজা করে বলেন, তোমার অনেকগুলো ভ্লগ দেখলাম আমার ভবিষ্যৎ নায়িকার সঙ্গে, হানিয়ার সঙ্গে।

পাশ থেকে একজন জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, একটা সিনেমা নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই শাকিব–ভক্তদের মাঝে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে কোন ছবিতে হানিয়া আমিরকে দেখা যেতে পারে এ ব্যাপারে শাকিব এখনও কিছু নিশ্চিত করেননি।

তবে ভক্তরা ইতিমধ্যে ধারণা করা শুরু করেছেন। কারও মতে, ‘প্রিন্স’ ছবিতে শাকিব–হানিয়া জুটি দেখা যেতে পারে। আবার কেউ বলছেন, ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা নতুন রোমান্টিক ছবিটিতেও থাকতে পারেন তিনি।

উল্লেখ্য, ‘সোলজার’ ছবির শুটিং শেষ করে শাকিব খান ডিসেম্বর থেকে ‘প্রিন্স’ সিনেমার শুটিং শুরু করবেন। এরপর আগামী বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি আজমান রুশো পরিচালিত আরেকটি নতুন ছবির কাজে অংশ নেবেন, যার নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

সেই ছবির নায়িকা হিসেবে একেবারে নতুন মুখ নেওয়ার পরিকল্পনাও চলছে বলে জানা গেছে।

“২৫০ অবৈধ নিয়োগ, কোটি টাকার আমানত—সিসিক কর্মচারী সোহেলের ‘অন্ধকারের সাম্রাজ্য’ উন্মোচিত”

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২২ পূর্বাহ্ণ
   
“২৫০ অবৈধ নিয়োগ, কোটি টাকার আমানত—সিসিক কর্মচারী সোহেলের ‘অন্ধকারের সাম্রাজ্য’ উন্মোচিত”

২০০৬ সালে চাকরি। বেতন ছিল মাত্র ৩০০০ টাকা। পদ সিলেট সিটি করপোরেশনের আদায়কারী। এভাবেই কর্মজীবন শুরু সোহেল আহমদের। তারপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। প্রায় দুই দশক। সেই সোহেল এখন আর সামান্য বেতনের কর্মচারী নন। তখন দুই বেলা পেট ভরে খেতে না পেলেও এখন তিনি থাকেন সিলেট শহরের অভিজাত এলাকায়। আছে নামে-বেনামে সম্পদ। নিজের এবং স্ত্রীর নামে শহরের অভিজাত এলাকাগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক বহুতল ভবন। রয়েছে দামি গাড়ি। শপিং মলে দোকান। বিপুল পরিমাণ জমি।

আর আছে ব্যাংকে কোটি টাকার আমানত। সামান্য বেতনের সোহেলের এই উত্থান রাজকীয়। তার কাছে সিলেট সিটি করপোরেশন-সিসিক রীতিমতো আলাদীনের চেরাগ। সিসিকে চাকরি হওয়ার পরপরই পাল্টে যেতে শুরু করে তার একসময় দুই বেলা পেট ভরে খেতে না পেলেও এখন তিনি থাকেন অভিজাত এলাকায়। চলনে-বলনে আসে পরিবর্তন। তিনি প্রথমদিকে আশীর্বাদ লাভ করেন সিসিকে দুর্নীতির কিং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমানের। তার ছায়াতলে আশ্রয় নেওয়ার পর আর কে পায় তার নাগাল। তিনি দরিদ্রতাকে পেছনে ফেলেন। তার সবচেয়ে সেরা সময় আসে যখন তিনি সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত ‘একান্ত সুযোগ পাল্টে দেয় তার পেছনের চেনা জগৎ।

ঘোর অন্ধকারের পর তার জীবনের পূর্বাকাশে উদিত হয় টাকার সূর্য। তিনি শূন্য থেকে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। গড়ে তোলেন কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়! সোহেল আহমদ হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। যার জীবন চলত ধার-দেনায়। তিনি এখন বিলাসবহুল ভবনের মালিক। বিশ্বের একাধিক দেশে ভ্রমণকারী। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন মেয়রের ‘একান্ত সহকারী’ হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেন হানিফুর রহমান। নিজের খায়েশ পূরণ করতে তারই একান্তজনকে ভিড়িয়ে দেন মেয়রের পাশে।

তার মাধ্যমেই হানিফ সাবেক মেয়রের কাছ থেকে অনেক সুবিধা বাগিয়ে নিতে পেরেছিলেন। এর পর থেকেই সোহেল সিটি করপোরেশনের ভেতরকার অদৃশ্য শক্তিতে পরিণত হন। নিয়োগ, প্রমোশন, টেন্ডার- সর্বত্র ছিল তার একচেটিয়া আধিপত্য। তাকে ব্যবহার করে হানিফ গড়ে তোলেন নিজের দুর্নীতির সাম্রাজ্য। ওই সিন্ডিকেটের প্রধান দুই ব্যক্তি ছিলেন হানিফ-সোহেল। এই জুটিই সিসিকের ভেতরের বেশির ভাগ কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারা চাকরি দেওয়ার নামে প্রার্থীদের কাছ থেকে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। চাকরিপ্রার্থী নারীদের রেস্টুরেন্টে ডেকে নিয়ে দেওয়া হতো অনৈতিক প্রস্তাব। কেউ রাজি হলে চাকরি হতো। না হলে দিনের পর দিন ঘুরেও শেষমেশ তারা চাকরি থেকে বঞ্চিত হতেন। এমন অভিযোগ মিলেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে।
বর্তমানে সোহেলের বেতন ৩০ হাজার টাকা।

এই টাকায় সংসার চালিয়ে কীভাবে বাড়ি-গাড়ির মালিক হলেন? কীভাবে তার পাসপোর্টে এক ডজন দেশের ভিসা লাগিয়ে সেইসব দেশ ভ্রমণ করলেন? তা-ও আবার কখনো কখনো সপরিবারে! কীভাবে তার নামে একাধিক ভবন, কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স?- এমন প্রশ্ন সিসিকের অনেকেরই।
অভিযোগ আছে, গত এক দশকে গোপনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৫০-এরও বেশি কর্মচারী।

তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ২ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। তার হাত ধরে নিয়োগ পাওয়া অনেকেই আজ কর শাখা, পানি শাখা, পরিবহন ও প্রকৌশল শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শাখা থেকে মাসিক মাসোহারা আদায় ছিল তার নিয়মিত আয়। এখন সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার- এই চোরেরা আর কত দিন আমাদের টাকায় রাজত্ব করবে? রাষ্ট্রীয় চাকরি কি শুধুই ঘুষ, অনৈতিক প্রস্তাব আর স্বজনপ্রীতির হাতিয়ার হয়ে থাকবে? আমরা কি এইসব ‘আধুনিক চোরদের’ জন্য চুপ করে থাকব?

এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সোহেল আহমদ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তার মন্তব্য, সব অভিযোগ মিথ্যা। এগুলো তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।

You cannot copy content of this page