খুঁজুন
রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

বাংলাদেশে প্রথমবার ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল সরকারি ঋণ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
বাংলাদেশে প্রথমবার ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়াল সরকারি ঋণ
23

বাংলাদেশের সরকারি ঋণ প্রথমবারের মতো ২১ লাখ কোটি টাকার সীমা অতিক্রম করেছে। অর্থ বিভাগের সদ্য প্রকাশিত ঋণ বুলেটিনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুন শেষে সরকারের মোট দায় দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন টাকা। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল ১৮ দশমিক ৮৯ ট্রিলিয়ন টাকা।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সরকারি ঋণের বড় অংশই এখন বিদেশি উৎস থেকে নেওয়া। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৯ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৪৪ শতাংশ। গত পাঁচ বছর ধরে এ অংশটিই সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ২০২১ সালে যেখানে বৈদেশিক ঋণ ছিল ৪ দশমিক ২০ ট্রিলিয়ন টাকা, সেখানে এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড–পরবর্তী অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বাজেট সহায়তা, পাশাপাশি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্পের অর্থায়ন বৈদেশিক ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ।

অভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও সরকারের ঋণভার আগের বছরের তুলনায় কম নয়। গত অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৫ ট্রিলিয়ন টাকা, যা আগের বছরের ১০ দশমিক ৭৬ ট্রিলিয়ন টাকার চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। মাত্র চার বছর আগে ২০২১ সালে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ২২ ট্রিলিয়ন টাকা—অর্থাৎ এখানেও বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য।

বিশ্লেষকদের মতে, অভ্যন্তরীণ বাজারে সরকারের ধার নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেলে বেসরকারি খাতের জন্য ব্যাংকঋণের সুযোগ কমে যায়—যা বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব সংগ্রহ কাঙ্ক্ষিত হারে না বাড়ায় সরকারকে বারবার ধার নিতে হচ্ছে। রাজস্ব বাজেট উদ্বৃত্ত না থাকায় উন্নয়ন ব্যয়ের বড় অংশই নির্ভর করছে ঋণের ওপর।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)–এর সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে সরকারের ঋণের ওপর নির্ভরতা আরও বাড়বে। উন্নয়ন ব্যয় বজায় রাখতে সরকারি খাত বারবার নতুন ঋণের দিকে ঝুঁকছে—যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

অর্থনীতিবিদদের ভয়—ঋণের এ ধারাবাহিক বৃদ্ধি ভবিষ্যতে সুদ পরিশোধের চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। বর্তমানে সরকারের মোট বাজেট ব্যয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই সুদ পরিশোধে চলে যাচ্ছে। ঋণের বোঝা যত বাড়ছে, ততই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় করার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার, করনেট সম্প্রসারণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো এবং অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো ছাড়া এই প্রবণতা থামানো কঠিন হবে।

সরকারি ঋণ ২১ লাখ কোটি টাকা ছাড়ানোর বিষয়টি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়—এটি অর্থনীতির ওপর বাড়তি চাপ ও ভবিষ্যৎ বাজেট কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। দেশের চলমান উন্নয়নধারাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য এখনই প্রয়োজন রাজস্ব আয় বাড়ানো, ঋণ ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করা এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প ব্যয় বন্ধ করা।

বরিশালে দফায় দফায় সংঘর্ষ: অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১:৩০ পূর্বাহ্ণ
   
বরিশালে দফায় দফায় সংঘর্ষ: অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর

হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় হামলা-পাল্টাহামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড এলাকা। এ সময় শ্রমিকদের হামলায় সরকারি বিএম কলেজের ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গোটা নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। নথুল্লাবাদের একাধিক বাসের কাউন্টার এবং বাস ভাঙচুর করেছে। বেশ কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেন তারা।

শ্রমিকদের দাবি, শিক্ষার্থীদের হামলায় অন্তত ২০ শ্রমিক আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে অর্ধশতাধিক বাস। আহত শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীদের বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত সোয়া ৭টা থেকে শুরু হয় ছাত্র-শ্রমিক হামলা-পাল্টা হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নথুল্লাবাদ এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসসদস্যরা বাসগুলোতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। বর্তমানে গোটা বাসস্ট্যান্ড এলাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র নেতা রাজু জানিয়েছেন, শনিবার বিকেলে বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবু বক্কর হিজলা উপজেলা থেকে ‘সোহান হাওলাদার’ নামক বাসে বরিশালে ফিরছিল।

তার কাছে ভাড়া চাইলে তিনি বিএম কলেজ শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে হাফ ভাড়া দিতে চান। কিন্তু বাসের সুপারভাইজার এবং হেলপার তার কাছে ফুল ভাড়া দাবি করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শিক্ষার্থী আবু বক্করকে লাঞ্ছিত করেন শ্রমিকরা।

আবু বক্কর ঘটনাটি বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের জানান। সন্ধ্যা ৬টায় বাসটি নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছলে রাজুসহ বিএম কলেজের একদল শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ গিয়ে ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এ সময় তাদের সঙ্গেও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেন শ্রমিকরা। এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টির এক পর্যায় ২৫-৩০ জন শ্রমিক একত্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান ছাত্রনেতা রাজু।

অপরদিকে, নথুল্লাবাদের পরিবহন শ্রমিক নেতা আরজু মৃধা বলেন, কলেজ বন্ধের দিনে হাফ ভাড়া কার্যকর হবে না। শনিবার কলেজ বন্ধের দিন এক শিক্ষার্থী বাসে ওঠে হাফভাড়া দেওয়ার কথা বলে। বাসের সুপারভাইজার সেটা না মেনে সম্পূর্ণ ভাড়া দাবি করে। এতে ক্ষুব্ধ হন ওই শিক্ষার্থী।

বিষয়টি তিনি তার সহপাঠীদের জানালে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদে হামলা-ভাঙচুর শুরু করে। তারা বাস টার্মিনালের মধ্যে একাধিক কাউন্টার, পার্কিং করা বিএমএফ, তুহিন, সামান্ত, জিএম এবং নিউ ভাই ভাই পরিবহনসহ একাধিক পরিবহনের অর্ধশতাধিক বাস ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। ২০ জনের বেশি শ্রমিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে।

নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, একসঙ্গে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকাজুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা বাস টার্মিনাল ভবন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা সবাই ভেতরে অবরুদ্ধ আছি। যে কারণে কতগুলো বাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং শ্রমিক আহত হয়েছে তা বলা সম্ভব না। তা ছাড়া এর বিপরীতে কোনো কর্মসূচি নিবেন কিনা সে বিষয়েও আপাতত কিছু জানেন না বলেন মালিক সমিতির সভাপতি।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুন উল ইসলাম বলেন, হাফ ভাড়া নিয়ে বাস শ্রমিক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। কিছুসংখ্যক বাস ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার করছে। তা ছাড়া সংঘর্ষের কারণে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঘটনাস্থলে বিপুল পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।

স্বরূপকাঠীতে খেলার মাঠে স্কুল নির্মাণের নামে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া
প্রকাশিত: রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১:১৯ পূর্বাহ্ণ
   
স্বরূপকাঠীতে খেলার মাঠে স্কুল নির্মাণের নামে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

স্বরূপকাঠী (নেছারাবাদ) উপজেলার একটি সরকারি খেলার  মাঠের একাংশে ইটের দেয়াল দিয়ে টিনশেড ঘর তুলে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে নেছারাবাদ আইডিয়াল ইনস্টিটিউট নামের বিদ্যালয়। অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মো. জাহিদুল ইসলাম নিজেই।

সরকারি জায়গায়, সরকারি লোগো ও প্যাড ব্যবহার করে গড়ে তোলা বিদ্যালয়টির সরকারি অনুমোদন নেই।

অথচ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে ইউএনওর কার্যালয় থেকেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনওর প্রভাব খাটিয়ে সহযোগিতার নামে ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও নির্মাণসামগ্রী।

উপজেলার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি ‘স্টেডিয়াম মাঠ’ এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।

সেখানে নতুন করে বিদ্যালয় নির্মাণের প্রয়োজন নেই এবং এটি মাঠ দখলের শামিল।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নেছারাবাদ উপজেলায় বর্তমানে ১৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।:

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন।

সম্প্রতি ‘সুশিক্ষার মানোন্নয়ন’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি মাঠের একাংশে ইট ও টিন দিয়ে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্মাণকাজের জন্য ইউএনও স্থানীয় ইটভাটা, ক্লিনিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। উপজেলার আটটি ইটভাটা থেকে বিনামূল্যে প্রায় ৪০ হাজার ইট এবং বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান নেওয়া হয়েছে।

আশা ব্রিকসের পরিচালক মো. অলি হাসান বলেন, ‘স্যার আমাদের ভাটায় ডেকে পাঁচ হাজার ইট চেয়েছিলেন। আমি আট হাজার দিয়েছি।

ইবিসি ব্রিকসের মালিক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, ‘সব ভাটা থেকেই পাঁচ হাজার করে ইট নেওয়া হয়েছে। শুনেছি বাজার কমিটি থেকেও ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।’

আবেদ আলী প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার সহযোগিতা করতে বলেছেন। না দিলে বিপাকে পড়তাম। তাই ২০ হাজার টাকা দিয়েছি।’ জাহানারা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘সরকারি কাজের নামে অনুদান দিতে হয়েছে।’

স্থানীয়রা বলছে, পুরো বিষয়টাই এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। এমনকি কয়েকজন অভিযোগকারীর বক্তব্যের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয় নির্মাণে ব্যবহৃত কাঠের কিছু অংশ বনবিভাগের জব্দ করা গাছ থেকে আনা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সেই কাঠের কিছু অংশ ইউএনও অফিসের এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেছারাবাদ শাখার উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘১৬৯টি স্কুল থাকা অবস্থায় মাঠ দখল করে নতুন স্কুল বানানো অনৈতিক। তাও আবার সহযোগিতার নামে অর্থ তোলা, এটা আরো  অগ্রহণযোগ্য।’

অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুশিক্ষার মানোন্নয়নে আমি স্কুল করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করেছেন।’ তবে তিনি কত টাকা বা কত পরিমাণ সামগ্রী সহযোগিতা হিসেবে পেয়েছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি ইউএনও।

রাবিতে ৪০ বছর পর ছাত্রশিবিরের আয়োজনে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

রাবি প্রতিনিধি,
প্রকাশিত: শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫, ৩:১৯ অপরাহ্ণ
   
রাবিতে ৪০ বছর পর ছাত্রশিবিরের আয়োজনে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

চার দশকেরও বেশি সময় পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে নবীনবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রশিবির। শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয় সংগঠনটি।

সংগঠনটির ক্যাম্পাসে সর্বশেষ নবীনবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালে। সেদিন শাখা ছাত্রমৈত্রী, জাসদ, ছাত্রলীগের বাধা ও পরবর্তী সংঘর্ষে ছাত্রশিবিরের চার কর্মী নিহত হন। এরপর নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে শিবির তাদের নবীনবরণ আয়োজন ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করে আসছিল।

নবীন বরণে এসে অনুভূতি প্রকাশ করে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম ফাহিম বলেন, এরকম নবীনবরণ আমরা আর কোনো সংগঠনের কাছ থেকে পাইনি। আমাদের বলা হতো শিবির নারী বিদ্বেষী, শিবির রগ কাটে। কিন্তু বাস্তবতা হলো—আমরা তাদের যত কাছাকাছি গেছি, তত তাদের সম্পর্কে জেনেছি এবং তাদের মতাদর্শ বুঝতে পেরেছি। আমরা চাই আজকের এই ক্যারিয়ার গাইডলাইনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক এবং শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যায় তারা যেন সবসময় তৎপর থাকেন।

এসময় রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন বলেন, অতীতে আমার ছাত্ররা ৮-১০ হাজার টাকা দিয়ে হলে উঠতে হতো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকার সিট বাণিজ্য হতো৷ আমরা হলগুলোতে মেধার ভিত্তিতে সিট বন্টন চালু করেছি৷৷ ফলে সিটবাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। অতীতে তুচ্ছ কারণে আমাদের ছাত্রদের জীবন দিতে হয়েছে৷ এই ক্যাম্পাসে পদ্মা সেতুর জন্য টাকা উঠানো হয়েছিল। সেই টাকা ভাগাভাগি নিয়ে মানুষ মেরে ফেলেছে৷

এদিন নবীনবরণের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নানারকম উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়৷ পরে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গাইডলাইন ও দিকনির্দেশনামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ও চাকসু ভিপি সাদিক কায়েম ও ইব্রাহিম হোসেন রনি। প্রধাম আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হল প্রভোস্ট, শাখা শিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

You cannot copy content of this page