স্বরূপকাঠীতে খেলার মাঠে স্কুল নির্মাণের নামে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের অভিযোগ
স্বরূপকাঠী (নেছারাবাদ) উপজেলার একটি সরকারি খেলার মাঠের একাংশে ইটের দেয়াল দিয়ে টিনশেড ঘর তুলে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে নেছারাবাদ আইডিয়াল ইনস্টিটিউট নামের বিদ্যালয়। অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম নিজেই।
সরকারি জায়গায়, সরকারি লোগো ও প্যাড ব্যবহার করে গড়ে তোলা বিদ্যালয়টির সরকারি অনুমোদন নেই।
অথচ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে ইউএনওর কার্যালয় থেকেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইউএনওর প্রভাব খাটিয়ে সহযোগিতার নামে ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও নির্মাণসামগ্রী।
উপজেলার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারি ‘স্টেডিয়াম মাঠ’ এলাকায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, মাঠটি দীর্ঘদিন ধরে খেলাধুলা ও সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
সেখানে নতুন করে বিদ্যালয় নির্মাণের প্রয়োজন নেই এবং এটি মাঠ দখলের শামিল।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, নেছারাবাদ উপজেলায় বর্তমানে ১৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ অবস্থায় নতুন একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।:
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মার্চ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন।
সম্প্রতি ‘সুশিক্ষার মানোন্নয়ন’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনি মাঠের একাংশে ইট ও টিন দিয়ে স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করেন।
অভিযোগ রয়েছে, ওই নির্মাণকাজের জন্য ইউএনও স্থানীয় ইটভাটা, ক্লিনিক ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ ও নির্মাণ সামগ্রী সংগ্রহ করেছেন। উপজেলার আটটি ইটভাটা থেকে বিনামূল্যে প্রায় ৪০ হাজার ইট এবং বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অনুদান নেওয়া হয়েছে।
আশা ব্রিকসের পরিচালক মো. অলি হাসান বলেন, ‘স্যার আমাদের ভাটায় ডেকে পাঁচ হাজার ইট চেয়েছিলেন। আমি আট হাজার দিয়েছি।
ইবিসি ব্রিকসের মালিক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন, ‘সব ভাটা থেকেই পাঁচ হাজার করে ইট নেওয়া হয়েছে। শুনেছি বাজার কমিটি থেকেও ৭৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।’
আবেদ আলী প্রাইভেট হাসপাতালের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্যার সহযোগিতা করতে বলেছেন। না দিলে বিপাকে পড়তাম। তাই ২০ হাজার টাকা দিয়েছি।’ জাহানারা হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘সরকারি কাজের নামে অনুদান দিতে হয়েছে।’
স্থানীয়রা বলছে, পুরো বিষয়টাই এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। এমনকি কয়েকজন অভিযোগকারীর বক্তব্যের অডিও রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয় নির্মাণে ব্যবহৃত কাঠের কিছু অংশ বনবিভাগের জব্দ করা গাছ থেকে আনা হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, সেই কাঠের কিছু অংশ ইউএনও অফিসের এক কর্মকর্তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে।
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেছারাবাদ শাখার উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘১৬৯টি স্কুল থাকা অবস্থায় মাঠ দখল করে নতুন স্কুল বানানো অনৈতিক। তাও আবার সহযোগিতার নামে অর্থ তোলা, এটা আরো অগ্রহণযোগ্য।’
অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুশিক্ষার মানোন্নয়নে আমি স্কুল করার উদ্যোগ নিয়েছি। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে সহযোগিতা করেছেন।’ তবে তিনি কত টাকা বা কত পরিমাণ সামগ্রী সহযোগিতা হিসেবে পেয়েছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি ইউএনও।

আপনার মতামত লিখুন